মোঃ আকরাম হোসেন স্টাফ রিপোর্টার
আশুলিয়ার পাড়াগাঁয়ে ভূমিদস্যুদের কবল থেকে নিজ জমি উদ্ধার করতে আদালতে মামলা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা আনিসুর রহমান। দীর্ঘদিন ধরে মমতাজ উদ্দিন গং আনিসুর রহমানের ক্রয়কৃত সম্পত্তি দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন এবং আদালতের দ্বারস্থ হয়েও কোনো সুরাহা করতে না পেরে শেষমেশ মামলা করেন ভুক্তভোগী আনিসুর রহমান।
*ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ*
আদালতে করা মামলার তদন্তে সাভার মডেল থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মমতাজ উদ্দিন গং প্রতারণামূলকভাবে (বিডিএস) খতিয়ানে আনিসুর রহমানের নানা জুলমত আলীর সম্পত্তি নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন। আনিসুর রহমান স্থানীয়ভাবে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, কিন্তু বিবাদীরা নোটিশ পেয়েও পরিষদে হাজির হননি।
*আদালতের মামলা ও আইনি লড়াই*
২০২৪ সালের ১৮ মার্চ সাভার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে, বাদী আনিসুর রহমান,মমতাজ উদ্দিন গংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি ৩২৫/২০২৪ ধারা সমূহ ৪২০, ৪৬৫, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ৫০৬ দণ্ডবিধির অধীনে দায়ের করা হয়। অন্যদিকে, প্রতিপক্ষ মামলাজট কমানোর পরিবর্তে, ঢাকার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে ২৬ জুলাই ২০২৪ তারিখে আনিসুরের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন। মামলা নং ৫১২/২০২৪ ধারাসমূহ ১৪৩, ১৪৭, ৩২৩, ৩২২, ৩২৪, ৩৮৫ ও ১০৯ পেনাল কোডের অধীনে দায়ের করা হয়।
*জমি দখল নিয়ে উত্তেজনা ও হামলার অভিযোগ*
আনিসুর রহমানের জমি পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টায় বিফল হয়ে, মমতাজ গং সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে জমিতে আনিসুরের রোপণ করা গাছপালা বিনষ্ট করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আনিসুর রহমান বলেন,”মমতাজ গংয়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে এলাকার কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। আমার নিজের জমিতে গেলে তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আমি আতঙ্কিত; তারা যে কোনো সময় আমাকে হত্যা করতে পারে।”
*প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা*
আনিসুর রহমানের আইনজীবী মামলাটি নিয়ে বলেন,আমরা আদালতে আইনের ন্যায়ের আশায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।ভূমিদস্যুরা জোরপূর্বক জমি দখলে রেখে সমাজে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশু হস্তক্ষেপ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মমতাজ গং প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কেউ পায় না। একজন গ্রামবাসী বলেন,ওদের বিরুদ্ধে কথা বললেই নানান হুমকি দেয়া হয়। ভয়ে কেউ মুখ খোলে না।”
*সংঘাতের সমাধান কীভাবে সম্ভব?
এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও ইউপি সদস্যরা জানান,আমরা ন্যায়বিচারের স্বার্থে দুই পক্ষকে আলোচনায় বসতে বলেছি।কিন্তু মমতাজ গং কোনোভাবেই আলোচনায় আসতে চায় না। প্রশাসনকে অনুরোধ করব যাতে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।
আশুলিয়ার এই জমি নিয়ে বিরোধ এবং উত্তেজনার প্রেক্ষিতে আনিসুর রহমান বলেন,আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।মমতাজ গংয়ের দখলদারিত্ব রোধে প্রশাসনের সহায়তা একান্ত প্রয়োজন।আমি চাই, প্রশাসন অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিবেন।
আশুলিয়ায় ভূমি দখল নিয়ে আনিসুর রহমান ও মমতাজ গংয়ের বিরোধ নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।আনিসুর রহমানের জমি দখল ও প্রাণনাশের হুমকির প্রেক্ষিতে দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন।ভূমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে, আশা করা যায় এই বিরোধের একটি স্থায়ী সমাধান আসবে।