স্টাফ রিপোর্টার মোঃ আনোয়ার হোসেন।
ময়মনসিংহে ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিলের পর আদালত আমলে না নিয়ে আসামীকে খালাসের আদেশ প্রদান করেছেন। এঘটনায় এসআই ও ওসির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেছেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী হলেন- ঈশ্বরগঞ্জ থানার দুর্গাপুর এলাকার মৃত কুবেদ ভূইয়ার ছেলে মোঃ হেলিম মাস্টার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন। যথাযথ সম্মানের সাথে গত ইং ২০০৭ সনে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে বার্ধক্য জনিত কারণে শারীরিকভাবে অচল, বিছানায় প্রস্রাব পায়খানা করার রোগী হয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করছে। বার্ধক্য জনিত কারণে নিজের জ্ঞান বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে। উনি লাঠি ছাড়া চলাফেরা ও কারো সাহায্য ছাড়া প্রস্রাব পায়খানাও করতে পারে না। চোখে কম দেখে, কানে কম শোনে। গত ৫ বছর পূর্বে কয়েক মাসের ব্যবধানে দুইবার হার্ট স্ট্রোক করেছিল। এরপর থেকে চলাচলে অক্ষম হয়ে পরে। এলাকায় একজন সৎ, সুনাগরিক, সৎ- চরিত্রবান, আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে জনশ্রুতি রয়েছে। উনার বিরূদ্ধে পূর্ব বিরোধের জেরে গত সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) ০৯ বছরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের নাটক সাজিয়ে শিশুটির বাবা প্রতিহিংসা বশত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ ( সংশোধিত ২০২০) এর ৯(১) ধারায় ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর ঈশ্বরগঞ্জ থানায় ১২ নং মামলাটি দায়ের করে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, এঘটনায় পুলিশ উনাকে গ্রেফতার করলেও সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালত মেডিকেল রিপোর্টে ভিকটিম শিশুটি ধর্ষণ (বলাৎকার) হয়নি মর্মে উল্লেখ থাকায় গত বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ, ২০২৪) আসামীকে জামিনের আদেশ প্রদান করেন। যাহার প্রেক্ষিতে মামলার এজাহার, আদালতে ভিকটিমের ২২ ধারা জবানবন্দী ও মেডিক্যাল সার্টিফিকেটে গড়মিল রয়েছে। এমনকি মামলার এজাহারের বর্ণিত ১নং সাক্ষী পৃথক হলফনামার মাধ্যমে প্রকাশ করেছে যে, “আসামী হেলিম মাস্টারের বিরুদ্ধে বাদী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে এবং ভিকটিমকে ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা বা অন্য কোন অপরাধ উক্ত আসামী করে নাই। এছাড়া উল্লেখিত ধর্ষনের ঘটনায় পুলিশ কোন ধরনের আলামত বা High Vaginal Swab উদ্ধার করতে না পারা স্বত্তেও এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এসআই রুহুল কাইয়ূম ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগপত্র বা চার্জশিট আদালতে দাখিল করে। কিন্তু আদালত এই অভিযোগপত্র আমলে না নিয়ে আসামীকে খালাস প্রদানের আদেশ দেন। এই দুর্নীতিপরায়ণ পুলিশের এই এসআই অলৌকিক ক্ষমতায় ঈশ্বরগঞ্জ থানা থেকে বর্তমানে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় কর্মরত রয়েছে।
ভূক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের পরিবারবর্গ জানান, মিথ্যা ধর্ষণ মামলার বাদী উনাদের জায়গা সম্পত্তি বেদখল করার জন্য এসআইসহ ওসি মুস্তানুরকে উৎকোচ প্রদান করে মামলাটি এফআইআর করেছিল। এই মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকায় বর্তমানে এই শিক্ষকের শারীরিক অবস্থা গুরুতর। উনারাসহ এলাকাবাসী মিথ্যা মামলার বাদীসহ দোষী পুলিশের শাস্তি দাবি করেন। মামলাটি তদন্তের সময় এসআই কাইয়ূমের উৎকোচ গ্রহণের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডসহ ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগপত্র দাখিল করায় ওসিসহ এসআই এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি বরাবরে বিভাগীয় অভিযোগ দাখিল করেন ভুক্তভোগীর পরিবার। বর্তমানে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিভাগীয় অভিযোগটি তদন্ত করছেন।
ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিলের বিষয়ে জানতে মিথ্যা ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বর্তমানে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় কর্মরত এস আই রুহুল কাইয়ুমের সাথে যোগাযোগ করলে উনি জানান, দাখিলকৃত অভিযোগপত্র আদালত আমলে না নিয়ে আসামীকে খালাস প্রদানের বিষয়টি উনি জানেন না। এমনকি উৎকোচ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে এবিষয়ে তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেন।
আইজিপি বরাবরে দাখিলকৃত অভিযোগটির অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম জানান, অভিযোগটি উনি অনুসন্ধান করছেন।