নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাজীপুরের কাশিমপুর রওশন মার্কেট এলাকাজুড়ে অবাধে মাদকদ্রব্যের কেনাবেচা চলছে। বাংলা মদ, হেরোইন, গাঁজা ও ইয়াবার মতো মরণঘাতী মাদক বিক্রির মহোৎসবে রীতিমতো হাট বেঁধেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে এসব পণ্য বিক্রি করলেও প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি নেই। এর ফলে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষ।
মাদকের সহজলভ্যতা কাশিমপুরের যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, টাকার অভাবে অনেক তরুণ ও যুবক চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় সুশীল সমাজ ও বাসিন্দাদের দাবি, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তবে পুরো এলাকা অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রওশন মার্কেট ও এর আশেপাশের এলাকায় কিছু কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী সক্রিয়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
জহরলাল ও মিঠু বাংলা মদ বাসায় তৈরি করে বিক্রি করে।
জাকির ও রিপন রওশন মার্কেট এলাকায় হেরোইন ব্যবসার সাথে জড়িত।
মোঃ জুয়েল মন্ডল ইয়াবা ব্যবসায়ী তার সহযোগী ইমরান, দিদার হেলাল উদ্দিন মডেল স্কুল এন্ড কলেজের সামনে গলি। শাহ আলমের দোকান সংলগ্ন।
খোরশেদ ও মিসেস মনির হেরোইন পাড়া ও মন্ডলের বাসার পাশে সক্রিয়।
সবুজ ও মামুন করলা পাড়া ও এনায়েতপুরে ইয়াবা বিক্রিতে সক্রিয়।
সালেহ, মহি (সালেহের ছেলে) ও কাজল আলিম গার্মেন্টস ও করলা পাড়ায় গাঁজা ব্যবসায় নিয়োজিত।
শাহাজাদ খান ডেল্টা গার্মেন্টস সামনে ইয়াবা বিক্রেতা। মোটা খোরশেদের স্ত্রী হেরোইন ও ইয়াবা বিক্রিতে জড়িত।
কাশিমপুরের সুশীল সমাজ ও স্থানীয় বাসিন্দারা মাদকমুক্ত এলাকা গঠনে জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তাদের দাবি, মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। রওশন মার্কেটে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মাদক পাচার বন্ধ করতে হবে। রওশন মার্কেট এলাকায় মাদকের রমরমা ব্যবসা যেন কোনো রকম বাধাবিপত্তি ছাড়াই চলছে। বাংলা মদ, হিরোইন, গাঁজা ও ভয়াবহ ইয়াবার অবাধ বিক্রিতে স্থানীয়রা চরম উদ্বিগ্ন। বিস্ময়করভাবে, এ সব কিছুই ঘটছে পুলিশের বিট অফিসের সামনে, যার দায়িত্বই হলো এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু রওশন মার্কেট এখন মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদক কেনাবেচা। আশপাশের স্কুল-কলেজপড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা এই ভয়াবহ আসক্তির ফাঁদে পড়ছে। মাদকের এমন অবাধ চলাফেরায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের সদিচ্ছা ও কার্যকারিতা নিয়েও। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, যদি বিট অফিসের নাকের ডগায় এমন চিত্র হয়, তাহলে অন্যান্য এলাকাগুলোর অবস্থা কী হতে পারে—তা সহজেই অনুমান করা যায়।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় মাদক কারবারিরা দিনদিন স্পর্ধিত হয়ে উঠছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, কাশিমপুরে মাদকবিরোধী অভিযান কি শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ? আর নাম সর্বস্ব দুই একজনকে ধরা হলেও পরের দুই এক দিন পরেই বের হয়ে চলে আসে জামিনে এসেই আবারো একই কাজে বৃহৎ আকারে শুরু করে। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে কাশিমপুরের যুবসমাজ ও সাধারণ মানুষকে রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন নিয়মিত অভিযান ও মনিটরিং জোরদার করতে হবে। সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মন্দিরে কর্মশালার আয়োজন করতে হবে। মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করে স্থানীয় পর্যায়ে তদারকি বাড়াতে হবে।
কাশিমপুরের রওশন মার্কেট এলাকায় মাদকের অবাধ বিস্তার ধ্বংস করছে যুবসমাজকে, বাড়িয়ে দিচ্ছে অপরাধপ্রবণতা। প্রশাসন যদি এখনই কঠোর না হয়, তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। সময় থাকতে সচেতনতা ও কঠোর আইন প্রয়োগই পারে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখাতে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গাজীপুর জেলার উপ-পরিচালক ইমদাদুল ইসলাম মিঠুন বলেন:
“আমরা রওশন মার্কেট এলাকাসহ কাশিমপুরের বিভিন্ন স্থানে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমাদের এই অভিযান চলমান থাকবে। মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছি। যেকোনো ধরনের তথ্য ও প্রমাণ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সুশীল সমাজ মনে করছে, কিশোর-কিশোরী ও যুবসমাজকে রক্ষার জন্য এখনই সময় উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের। প্রশাসনের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন না হলে মাদকের এই ভয়াল ছায়া পুরো কাশিমপুরকে গ্রাস করতে পারে।