স্টাফ রিপোর্টার মোঃ আনোয়ার হোসেন
শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার এক নারী নারী প্রতারকের মিথ্যা মামলায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। নিরহ মানুষকে কৌশলে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করা তার পেশা ও নেশা।
প্রতারক নারী হলো নালিতাবাড়ী থানার চিনামারা এলাকার মোঃ মজিবুর রহমানের মেয়ে মমতাজ বেগম মুক্তা (৪০)।
এই প্রতারক নারী (২০ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯) নালিতাবাড়ী থানার আড়াইআনি চকপাড়া এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ফজলুল হকের ছেলে মোঃ হারুন অর রশিদ মুকুলকে ১ম বার বিবাহ করে। এই প্রতারক নারী অসৎ উদ্দেশ্যে মুকুলের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(খ) ধারায় নালিতাবাড়ী থানার মামলা নং- ০৪, তাং- ১০/০১/২০০৪, জিআর নং-২৪/০৪ দায়ের করে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ আঃ করিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক রনঞ্জন দাস উক্ত মামলার আসামী মুকুলের বিরুদ্ধে তদন্ত ও স্বাক্ষ্য প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় উক্ত মামলার দায় হতে অব্যাহতি (খালাস) প্রদান করেন। পরবর্তীতে তালাকের মাধ্যমে
তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়।
এই নারী জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ থানার শাহাজাদপুর এলাকার মৃত খোকা মিয়ার ছেলে পুলিশ কন্সটেবল মোঃ ছামিউল হক লালিতাবাড়ী থানায় কর্মরত থাকাকালীন (২৩ নভেম্বর ২০০৮) তারিখে ৩,০০,০০০/- টাকা দেনমোহর ধার্য্যে বিবাহ করে। এরপর শেরপুরের পারিবারিক জজ বাহাদুরের আদালতে পারিবারিক মামলা নং- ৩৭/২০০৯ দায়ের করে। পুলিশ কনস্টেবল দেনমোহরের টাকা দিয়ে আপোষ মিমাংসা করে।
প্রতারক নারী তাহার ৩য় স্বামী লালিতাবাড়ি থানার যোগানীয়া এলাকার মৃত সিরাজুল হকের ছেলে মোঃ শফিকুল ইসলাম তারাকে (২২ এপ্রিল ২০১১) বিবাহ করে। এরপর এই নারীর কার্যকলাপে বনিবনা না হওয়ায় (১০ নভেম্বর ২০২০) শেরপুর জেলার নোটারী পাবলিকের সম্মূখে তালাক প্রদান করে। ২০১৪ সালে পুনরায় মোঃ শফিকুল ইসলাম তারাকে রেজিষ্ট্রী কাবিন মূলে বিবাহ করে। এরপর তাহার ৩য় স্বামী শেরপুর জেলার লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে কাবিনের টাকা এই নারীকে প্রদান করে আপোষ মিমাংসা করে।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইংরেজি ২০১০ সালে বাংলাদেশ সচিবালয়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, শেরপুর জেলার পুলিশ সুপার, লালিতাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবরে চিনামারা এলাকাবাসী ১৫০ জনের স্বাক্ষরে অভিযোগ দায়ের করে। এই অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, ” এই নারী একজন চরিত্রহীন, দেহ ব্যবসায়ী, প্রতারক লোভী, নারী ও শিশু পাচারকারী দলের সদস্য, অত্যাচারী। সে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। সে কিছুদিন আগে তার প্রথম স্বামী মুকুল মিয়ার সাথে কৌশলে অবৈধ সম্পর্ক করে ০২ লক্ষ টাকা আদায় করে। সে একাধিক বিয়ে করাসহ মাঝেমধ্যে এলাকার সহজ সরল ছেলেদের ফাঁদে ফেলে নগদ অর্থ আদায় করে। উক্ত নারীকে এএসআই মোঃ হানিফ মিয়া লালিতাবাড়ী থানায় কর্মরত থাকাকালীন সাহায্য সহযোগিতা ও তার বাড়িতে যাতায়াত করিত। তাহার অসামাজিক ও বেআইনি কাজে কেউ বাধা প্রদান করিলে তার বিরুদ্ধে কোর্টে ও থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসতেছে। সে অসহায় লোকদের বিরুদ্ধে ১০/১২ টি মিথ্যা মামলা কোর্টে ও থানায় দায়ের করে হয়রানি করে। এই নারীর শাস্তি দাবিসহ পুলিশের এএসআই মোঃ হানিফের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুবিচারের দাবি করেন। এই অভিযোগে ক্ষীপ্ত হয়ে ঐ এলাকায় ২০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। পরে আদালতে এই মামলার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা খারিজ হয়ে যায়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চিনামারা নদীরপাড় এলাকার মোঃ নাজমুল হোসেনের স্ত্রী মোছাঃ আমেনা বেগমের দাদীর বসত ও রান্না ঘর দখলের পরিকল্পনায় আগুন ধরাইয়া দেয়। উক্ত ঘটনায় আমেনা শেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সি.আরর আমলি আদালতে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি ৪৩৫/৪৩৬/৫০৬(২) ধারায় পিটিশন মামলা নং- ৯৯/২০১৯ দায়ের করে। বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
আরো জানা যায়, এই প্রতারক নারীর জমজ বোন মোসাঃ মুরশিদা বেগমের সহিত প্রতারণা করে প্রায় ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এঘটনায় এই নারীর জমজ বোন বাদী হয়ে গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৫০৬ ধারায় সিআর মামলা নং- ১১৬০/২০২০ দায়ের করে। এছাড়া উক্ত নারীর জমজ বোনের জায়গা জমি বিশ্বাস ভঙ্গ প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করে। এঘটনায় শেরপুর জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সি.আর আমলী আদালতে তার বোন বাদী হয়ে পুনরায় পিটিশন মামলা নং- ০৭/২০২২ দায়ের করে। উক্ত দুই টি মামলায় বর্তমানে বিচারাধীন।
এই প্রতারক নারী তার আপন জমজ বোনের সাথে পূর্ব বিরোধের জের ধরে বিভিন্ন কৌশলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করতে থাকে। গত (১৯ জুলাই ২০২২) এই নারীর তালাকপ্রাপ্ত ৩য় স্বামী শফিকুল ইসলাম তারা স্ট্রোক করে মারা যায়। এই সুযোগে তার আপন জমজ বোন মুরশিদাকে ৪ নং আসামী করে শেরপুর জেলার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/৫০৬/৩৪ ধারায় পিটিশন নং ৩৬০/২০২২ মূলে হত্যা মামলা দায়ের করে। আদালত লালিতাবাড়ী থানার ওসিকে এই মামলার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয়। পুলিশ
তদন্তে ও স্বাক্ষ্য প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত হয় নাই মর্মে তদন্ত প্রতিবেদনে আদালতে দাখিল করে।
নালিতাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আসাদ জানান, মমতাজের বিষয়ে মোবাইলে কিছু বলা যাবে না। সে প্রতারক, দেহ ব্যবসায়ী বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। এটা সত্যি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কথা বললে ক্ষতি হবে। সে দেহ ব্যবসা করে। তার সাথে কিছু পুলিশের সাথে বন্ধুত্ব তারা রাতে মমতাজের বাসায় যাওয়া আসা করে।
এসংক্রান্তে নালিতাবাড়ী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ দিদারুল আলম জানান, উক্ত অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।