শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সার্জেন্ট রহিমের চাঁদাবাজিতে অতিষ্টিত  ড্রাইভারা। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিশুর মৃত্যু। কাশিমপুরে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। দুমকিতে আবরারের ৫ম শাহাদাত বার্ষিকীতে ছাত্রদলের স্বরণ সভা-মৌণমিছিল ৭টি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির আনুমোতি দেওয়া হয়েছে। টঙ্গীতে খুনের মামলা তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ স্বজনদের দরিদ্র মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চাই: জহিরুল ইসলাম আশুলিয়ায় র‌্যাব-৪ এর অভিযানে ৫ আগস্ট একাধিক হত্যা মামলার আসামী সাদেক ভুইয়া গ্রেফতার। টুয়াখালী ভার্সিটি, উপাচার্যের সঙ্গে কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভা। দুমকিতে ৫১তম গ্রীষ্মকালীন বার্ষিক ক্রিয়া উদ্বোধন।

সাংবাদিক হিসেবেই দিপু খান বেঁচে থাকবেন ভেড়ামারার মানুষের হৃদয়ে

মো: লিটন উজ্জামান কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪
  • ৩৭ বার পড়া হয়েছে

মো: লিটন উজ্জামান কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :-

সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম দিপু খান না ফেরার দেশে চলে গেলেন। বেশকিছু দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হেরে গেলেন তিনি।

দিপু খান ছিলেন একজন শতভাগ মফঃস্বল সাংবাদিক।সাংবাদিকতার বাইরে তাঁর কোন পেশা ছিল না। হাজারো কস্ট, প্রতিকুলতার মাঝেও থেমে থাকেনি তাঁর কলম।

তাঁর নিউজ লেখার ধরণ, ভাষাগত দক্ষতা, সংবাদের শিরোনামসহ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে একধরণের মুন্সিয়ানা ফুটে উঠতো।

১৯৯৮ সাল থেকে দিপু ভাইকে আমি চিনি এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার অগ্রজতুল্য। ওই সময় তিনি ও প্রয়াত সাংবাদিক আবু আজাদ আব্দুল্লাহ ভাই কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার ভেড়ামারা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁরা দু’জনই ওই সময়ের দাপুটে সাংবাদিক ছিলেন। আমি তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র। ৯৮ সালের জুন মাসে পত্রিকার সম্পাদক মনজুর এহসান চৌধুরী মিঠু একদিন ভেড়ামারায় এসে তাঁদের দু’জনকে অব্যাহতি দিয়ে আমাকে ভেড়ামারা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেন। সেই থেকে শুরু হয় আমার সাংবাদিকতা।

তৎকালীন সময়ে অত্রাঞ্চলে পত্রিকাটির সার্কূলেশন শীর্ষে থাকায় শুরু থেকে পেশাগত কাজে আমাকে তেমন কোন বেগ পেতে হয়নি। অল্প দিনে আমিও সাংবাদিকতার কলাকৌশল রপ্ত করে ফেলি এবং পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।

নব্বই দশকের শেষ দিকে ভেড়ামারায় সাংবাদিক বলতে মানুষ দিপু-পিনুকে চিনতেন। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ থেকে শুরু করে সর্বত্রে তাঁদের দু’জনের বিচরণ ছিল। মরহুম ফারুক আহমেদ পিনু ভাই তখন যশোরের লোকসমাজ পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন। আন্দোলনের বাজার ও লোকসমাজ পত্রিকার মধ্যে সার্কুলেশনের প্রতিযোগিতা বিদ্যমান ছিল। স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় সংবাদগুলো পত্রিকায় তুলে ধরার প্রতিযোগিতায় আমাকেও নামতে হয়েছিল। সদ্য পত্রিকার কাজ হারানো শ্রদ্ধেয় দিপু ভাইকে আমি কখনো অসম্মান করিনি। তাঁর অনুরোধে অনেক নিউজ আমি আন্দোলনের বাজার ও প্রথম আলো পত্রিকায় ছেপেছি।

পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা ভেড়ামারা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সীমান্ত কথা পত্রিকা বের করার সিদ্ধান্ত নেন দিপু ভাই। থানার সামনে তিনি একটি অফিসও ভাড়া নেন। আমাকে তিনি অফার দেন তাঁর পত্রিকায় পার্টটাইম কাজ করার। যেহেতু ভেড়ামারার পত্রিকা, সেহেতু আমি দিপু ভাইয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে কিছুদিন কাজও করেছি। তখনই অনেক কাছ থেকে দিপু ভাইকে দেখেছি। পত্রিকা বের করতে একটা মানুষ কতটা পরিশ্রম করতে পারে, তাঁকে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, দিপু ভাইকে কাছ থেকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। চরম একরোখা মানুষটি কিছুদিন যেতে না যেতেই পত্রিকা ছাপানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন।

আমি যখন ভেড়ামারা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। তখন আমি একাধারে প্রথম আলোর ভেড়ামারা প্রতিনিধি, দেশের প্রথম অনলাইন পত্রিকা বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর এবং চ্যানেল এস টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি। ওইসময় দিপু ভাই আমাকে দৌলতপুর সীমান্তসহ মিরপুর উপজেলার বহু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। তাঁর সোর্স বরাবরই স্ট্রং ছিল। এতো প্রতিভা, এতো কানেকশন, তাঁরপরও তিনি বড় পরিসরে কাজ করার আগ্রহ দেখাননি কখনও। তাঁকে ভেড়ামারা ছেড়ে জেলা বা জাতীয় পত্রিকায় কাজ করার কথা বললে অনিহা প্রকাশ করতেন। আসলে তিনি কখনো ভেড়ামারা ছাড়তে রাজী হননি।

আমি যখন ঢাকা থেকে ভেড়ামারায় যেতাম, দিপু ভাইয়ের সাথে দেখা করতাম। লক্ষ্য করতাম তাঁর কোন পরিবর্তন হয়নি। বয়স বেড়ে গেল, অথচ মানুষটি একই রকম থেকে গেল। শেষদিকে তিনি কোন পত্রিকায় কাজ না করলেও ফেসবুকে তাঁর দৈনন্দিন সংবাদগুলো আমি নিয়মিত পড়তাম। স্থানীয় সাংবাদিকদের অনেকের মধ্যে নিউজ কপি পেস্ট করার প্রবনতা দেখেছি। কিন্তু দিপু ভাইকে গতানুগতিক নয়, ব্যতিক্রমধর্মী নিউজ করতে দেখেছি। অন্যদের থেকে একটু আলাদা এঙ্গেলে সংবাদের শিরোনাম করতেন।

প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে সাংবাদিক দিপু খান যখন ঢাকায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তখন একদিন হাসপাতালে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। হাসপাতালের বেডে শুয়ে দুর থেকে আমাকে দেখামাত্র পাশেথাকা ভাবীকে বললেন, ঐ যে উজ্জল আসছে। অনেকক্ষণ কথা বললাম, অভয় দিলাম, সাহস জোগানোর চেষ্টা করলাম।

বিদায়ের আগে আমার হাতে হাত রেখে তাঁর কিছুটা চাপা ক্ষোভ ও অভিমানের কথা নিচু স্বরে প্রকাশ করলেন। বলেছিলাম- আপনি দ্রুত সুস্থ হন সব ঠিক হয়ে যাবে ভাই।

ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলাম। ঢাকায় ফেরার আগের দিন দুপুরে হঠাৎ সংবাদ পেলাম দিপু ভাই আর নেই। যোহর নামাজ পড়ে কলেজপাড়ার বাড়ীতে দ্রুত ছুটে গেলাম দিপু ভাইকে এক নজর দেখতে। স্বজনদের কান্না আর আহাজারি দেখে বুকের মধ্যে কেমন যেন এক কস্ট অনুভব করলাম। তাঁর একমাত্র ছেলে শৈশবকে কি সান্তনা দেবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। মফঃস্বলের একজন সাংবাদিকের এভাবে চলে যাওয়াকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। হৃদয়বিদারক পরিবেশে দিপু ভাইয়ের মরদেহের পাশে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম, তাই ঘরের জানালা দিয়ে কিছুটা দুর থেকে তাঁর মুখটি দেখলাম।

বিকেলে ভেড়ামারা সরকারী কলেজ প্রাঙ্গণে জানাযার নামাজের আগে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাঁর মরদেহে পুষ্পমাল্য অর্পণকালে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। শেষবারের মতো শ্রদ্ধার ফুলে দিপু ভাইকে সম্মান জানালাম।

জানাযা শেষে তাঁকে যখন গোরস্তানে দাফন করা হচ্ছিলো, তখনও কতশত স্মৃতি মনে পড়ছিলো বার বার। একবার মনে হলো, দিপু ভাই এখনই এসে হয়তো বলবে- ‘উজ্জল আজকের নিউজের ইন্ট্রো কি হবি গো’?

দিপু ভাই পৃথিবীতে নেই, কিন্তু তাঁর অসংখ্য নিউজ ছাপা আছে পত্রিকার পাতায়, সোশ্যাল মিডিয়ায়। স্মৃতি হাতড়াবেন আর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবেন তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা।

সাংবাদিক হিসেবেই দিপু খান বেঁচে থাকবেন ভেড়ামারার মানুষের হৃদয়ে।

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের নামাজের সময়সুচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ
  • ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ
  • ১৫:৫৯ অপরাহ্ণ
  • ১৭:৪১ অপরাহ্ণ
  • ১৮:৫৪ অপরাহ্ণ
  • ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ
©2020 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102