নিজস্ব প্রতিনিধি
ঢাকার সাভারের আশুলিয়া থানাধীন জিরানী এলাকায় দারুল ইসলাহ মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী হুরাইরা আক্তার কামনা (১৫) রহস্যজনকভাবে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি এটি পরিকল্পিত হত্যা। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানপ্রধান আবদুল কাদেরকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত কামনা কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি আনিসুজ্জামান ও রোকেয়া বেগমের কন্যা।
স্থানীয় সূত্র, পুলিশ ও পরিবার জানায়, প্রায় দুই বছর ধরে কামনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল দারুল ইসলাহ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার আবদুল কাদেরের, যিনি আশুলিয়া থানা মোটর শ্রমিক লীগের সভাপতি এবং আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হক নুরুর আপন ভাই। প্রেমের সম্পর্কের সুযোগে কাদের কামনাকে ধর্ষণ করে এবং সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাদের মেয়েটিকে গ্রামের বাড়ি থেকে সাভারে নিয়ে আসে।তবে বিয়ের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করে, উল্টো কাদের তাকে গর্ভপাতের জন্য চাপ দিতে থাকে। এতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে কামনা বিষপান করেন। রোববার (৪ মে) সকালে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, মৃত্যুর আগে হাসপাতালে দেওয়া বক্তব্যে কামনা কাদেরের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে এবং আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে আশুলিয়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাভূমি’র এ প্রতিবেদককে বলেন, এ ঘটনায় হত্যার প্ররোচনার মামলা হয়েছে। তাকে সে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এলাকাবাসী ও মাদ্রাসার একাধিক সূত্র বলছে, কাদের ও তার ভাই নুরু দীর্ঘদিন ধরেই জিরানী এলাকায় রাজনৈতিক পরিচয় ও সন্ত্রাসী শক্তি ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। এর আগে কাদেরের ভাগ্নে রাসেলের বিরুদ্ধে একই মাদ্রাসার এক নারী কর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলেও তা আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে শিক্ষকদের বেতন আটকে রাখা, হুমকি প্রদানসহ নানা অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে কাদের ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন এবং প্রশ্ন তুলেছেন এটি আত্মহত্যা, না-কি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় থাকা একটি ঠান্ডা মাথার পরিকল্পিত খুন?
আশুলিয়ার সাধারণ জনগণ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সমাজ ‘হুরাইরা হত্যাকাণ্ডে’ জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে এ ঘটনার পেছনে থাকা রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলেরও বিচার দাবি করছে তারা।